রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন
কলাপাড়া প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর বালিয়াতলীতে সাপের কামড়ে বড় ভাই বেল্লাল হাওলাদার (৩৫) মারা যায়। রেখে যায় স্ত্রী ও দুই সন্তান। দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দুই পরিবারের সম্মতিতে দুই বছর পর কাবিন ছাড়া দেবরের সাথে বিয়ে হয় দুই সন্তানের জননী হাওয়া বেগম’র (৩৩)। তিন বছর সংসার করার পর দেবর বিবাহের কথা অস্বীকার করেন। শ্বশুড় বেধড়ক মারধর করে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেন।
এরপর থেকে স্বামীর সংসারে ফিরতে পারছেন না। আদালতে মামলা করলেও দীর্ঘ সুত্রিতায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে হাওয়া বেগম ও তার দুই সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে। দুই সন্তান নিয়ে বাবার সংসারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কুয়াকাটা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের নবীনপুর গ্রামের জালাল হাওলাদারের ছয় সন্তানের দ্বিতীয় সন্তান হাওয়া বেগম।
হাওয়া বেগম ও তার পরিবার জানান, ২০০৬ সালের ১লা মে কলাপাড়া উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের কোম্পানীপাড়া গ্রামের আব্দুল বারেক হাওলাদারের বড় ছেলে মোঃ বেল্লাল হাওলাদারের সাথে তার বিবাহ হয়। বিবাহের পর সুখ শান্তিতে চলছিলো তাদের সংসার। তাদের ঔরষে একটি কন্যা ও একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু এ সুখ বেশিদিন টিকল না।
২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর আমন ক্ষেতে ধান কাটতে গিয়ে বিষাক্ত সাপের কামড়ে মারা যায় স্বামী বেল্লাল হাওলাদার। দুই সন্তানের ভবিষ্যতের চিন্তায় উভয় পরিবারের সম্মতিতে ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর মাস্টার্স পাশ দেবর জসিম হাওলাদারের সঙ্গে বিবাহ হয়। তবে পরিবারের সকলের আগ্রহ থাকায় বিবাহ রেজিষ্ট্রি (কাবিন) করা হয়নি। বিয়ের তিন বছরের মধ্যে মরহুম বড় ভাই বেল্লাল হাওলাদারের রেখে যাওয়া সমস্ত অর্থ সম্পদ জসিম হাওলাদার আত্মসাৎ করেন। এরপর থেকে হাওয়াকে বিবাহের কথা অস্বীকার করে জসিম বাড়িতে আসেন না এবং ভরণ পোষন বন্ধ করে দেন। এক পর্যায়ে শ্বশুড় বারেক হাওলাদার বেধড়ক মারধর করে দুই সন্তানসহ তাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেন।
এরপর স্থানীয় পর্যায় কয়েক দফায় সালিশ বৈঠক হয়। সালিশগণের সিদ্ধান্ত মেনে নেয় শ্বশুড় বাড়ির লোকজন। কিন্তু হাওয়া বেগম দুই সন্তান নিয়ে শ্বশুড় বাড়ি গেলেই চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। এরপর তিনি ২০২২ সালের ২৬ মে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয় কুয়াকাটা কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদারকে। তিনি দুই পক্ষের সাথে কথা বলেন। এ সময় হাওয়া বেগমের স্বামী শশুর বিবাহের কথা স্বীকার করে সমঝোতা করবেন এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে তারা সমঝোতা না করায় পৌর মেয়র আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
মামলাটি চলমান থাকলেও আদালতের ধার্য তারিখ জানানো হয় হাওয়া বেগম ও তার পরিবারকে। তাদের নিযুক্ত উকিল সঠিকভাবে মামলা লড়ছেন না। হাওয়া বেগমের দাবি টাকা না থাকায় কেউ তার কথা শুনছেন না। জসিমের তদবিরের কাছে তিনি পরাজিত হবার আশংকা করছেন। এখন দুই সন্তান নিয়ে কোথায় যাবেন, কিন করবেন সেই চিন্তায় বিভোর।
এদিকে জসিম আদালতে বিবাহের বিষয়টি স্বীকার করছেন না। তবে বিবাহ বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে একটি ‘স্বীকারোক্তিনামা’ দিয়েছেন বিবাহকার্য সম্পন্নকারী স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মোঃ লিটন মুন্সী, মাদ্রাসা শিক্ষক মোঃ সোহাইব, গ্রাম পুলিশ মোঃ ইউসুফ আলী, গণ্যমান্য মোঃ লিটন হাওলাদার ও মোঃ বাবুল মোল্লা।
জসিম হাওলাদারের ছোট ভাই মাসুদ হাওলাদার বলেন, আমার বড় ভাই বেল্লাল হাওলাদার মারা যাওয়ার পর পরিবারের সকলের সম্মতিতে জসিম ভাই বিবাহ করেন। এর কয়েক বছর পর জসিম ভাই অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে শুনছি ভাবি আদালতে মামলা করেছেন। আমি দীর্ঘ বছর ঢাকা আছি। এখন কোন পর্যায়ে আছে আমি জানি না।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মোঃ লিটন মুন্সী বলেন, উভয় পরিবারের উপস্থিতিতে আমি বিবাহকার্য সম্পন্ন করেছি। কয়েক বছর পর জসিম অস্বীকার করছেন। পরবর্তীতে আদালতে মামলা হয়েছে। আমি আদালতে লিখিত স্বীকারোক্তিনামা দিয়েছি। এখন কি হয়েছে আমার জানা নেই। বিবাহের বিষয়টি স্বীকার করে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) ইউসুফ আলী বলেন, স্বীকারোক্তিনামায় আমিও স্বাক্ষর করেছি। জসিম হাওলাদার ও তার পরিবার হাওয়া বেগমের সাথে চরম অন্যায় করছেন।
এ বিষয়ে জসিম হাওলাদারের ব্যবহৃত ০১৭৮০.. ০০ মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করছেন না।
এ প্রসঙ্গে কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ‘হাওয়া বেগম বাদি হয়ে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেছিলো। বিজ্ঞাদালত তদন্তের জন্য আমার উপর দায়িত্ব দেন। আমি উভয় পক্ষকে ডেকে মীমাংসার চেষ্টা করছিলাম। জসিম ও তার বাবা আমার সাথে বিবাহের কথা স্বীকার করলেও আদালতে অস্বীকার করছেন।
Leave a Reply